সরকার সালাহউদ্দীন সুমন:
অভিযান সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে উপজেলায় চলছে রমরমা সুদের কারবার। চড়া সুদে টাকা খাঁটিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সুদে কারবারিরা। তাঁদের দৌরাত্ম্যে উপজেলায় এক শ্রেণির মানুষ দিন দিন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ফুলে ফেঁপে বড় হচ্ছে সুদে কারবারিরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুদে কারবারিরা এমন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সুদখোরদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের অনেকেই ব্যবসায়ী, অফিস আদালতে স্বল্প বেতনে কাজ করা মানুষ এবং সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা চড়া সুদের ফাঁদে পড়েন। সুদে কারবারিরা অধিক মুনাফায় টাকা ধার দেন এবং মাসের পর মাস এর সুদ নিয়ে থাকেন। একজন ঋণগ্রহীতা আসল টাকার দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা পরিশোধ করেও দেনা মুক্ত হতে পারে না। সুদের টাকা পরিশোধ করতে অনেকেই সহায়-সম্বল বিক্রি করে পথে বসেছেন।
অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী মহাজনেরা তাঁদের সুদের কারবার নির্বিঘ্ন করতে নিজ নিজ এলাকার দালাল, ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের মাসোহারা দিয়ে থাকেন। এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা ভয়ে ওই সব সুদখোরদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য মুখ খুলতে সাহস পায় না।
উপজেলার কাজুলী বেগম বলেন, আমি উপজেলার মোঃ শফিকুল ইসলাম সুদি কারবারির কাছ থেকে টাকা সুদে নিয়েছিলাম ৩,০০,০০০/- তাকে আমি ১০,০০,০০০/- টাকা সুদ দিছি। শুধু কাজুলী বেগম নয় তার মতোই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অনেক মানুষ ভুক্তভোগী।
এদিকে শফিকুল ইসলাম বর্তমানে চাল ও তেল ব্যবসার আড়ালে সুদ কারবারি করে গাড়ি-বাড়িসহ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেছেন। সে দিনদিন গাড়ি-বাড়ি-দোকানপাটের সংখ্যা বাড়িয়েই চলছেন। আজ হতে ১০ বছর আগে তিনি ছিলে একজন নিম্ন আয়ের মানুষ।
বিপদগ্রস্ত মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে চড়া সুদে সে টাকা দিতো। যার গ্যারান্টি হিসেবে চেক, স্ট্যাম্প আবার কখনও মোটরসাইকেল কিংবা সোনার গয়না রাখা হতো। তবে দীর্ঘদিন ধরে সুদের টাকা দিয়েও অনেকের টাকা শোধ হয়নি। সুদ টানতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। এই শফিকুল ইসলাম সুদারুর দৌরাত্ম এতোটাই বেড়ে যায় যে, এসব অসহায় মানুষের জমা রাখা চেক ব্যাংকে ডিজঅনার করে আদালতে গিয়ে মামলা করে। এলাকায় কুখ্যাত সুদব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই শফিকুল ইসলাম নীলফামারী আদালতে এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে (The Negotiable Instruments Act. 1881 138 ধারা মতে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন যাহার পিটিশন নম্বর ১৩৫/২৩ উক্ত অভিযোগে ফরিয়াদি বলেন যে, আসামি তাকে ১৩,০০,০০০/- চেক নিজ হাতে লিখে দিছেন কিন্তু চেকের লেখা এবং ফরিয়াদির লেখা তুলনা করে আদালতের কাছে প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে যে, চেকের লেখা গুলি ফরিয়াদির নিজের ও হতে পারে মানে ফরিয়াদি ফাকা চেক নিয়ে নিজে হাতে লিখতে পারেন। ড. শ্যামল বৌদ্ধ বনাম ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ৬৬ ডি এল আর ২০১৪, ৫৪৭ মামলা উচ্চ আদালত বলেন টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে কেউ চেক প্রদান করলে অবশ্যই সেই চেক প্রদান কারীকে চেকের অংক এবং প্রাপকের নাম লিখতে হবে। চেক সইকারি কর্তৃক চেকের টাকার অংক এবং প্রাপকের নাম চেক সই কারিকে লিখতে হবে তা না হলে ওই চেক ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে চেক হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। আলাউদ্দিন বনাম রাষ্ট্র ২৪ বিএলসি (এডি) ২০১৯ ১৩৯ মামলায় সর্বোচ্চ আদালত বলেন প্রকৃত পাওনা টাকার চেয়ে বড় অংক ব্লাঙ্ক চেকে বসিয়ে দেওয়া প্রতারণার একটি উপাদান এবং লেনদেনের গোড়ায় আঘাত করা এটি মেনে নেওয়া যায় না। দন্ডবিধি ৪৬৪ এর উদাহরণ সি ও ডি মোতাবেক ফাঁকা চেকে প্রাপকের চাইতে বেশি অর্থ বসিয়ে নেওয়া জালিয়াতি হিসেবে গণ্য হয়। বিশেষত যেসব চেক স্বয়ং দাতা বা দাতার নির্দেশিত ব্যক্তিকর্তৃক পূরণ করা হয়নি বরং দাতার ফাকা চেকে গ্রহিতা কর্তৃক বিপুল অংক বসিয়ে পূরণ করা হয়েছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত ভাবে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রতিয়মান হয় সে মামলা গুলো বিস্তর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। উক্ত আদেশের ধারাবাহিকতায় মহামান্য আদালত তদন্তের জন্য সিআইডি নিলফামারীতে প্রেরণ করা হয়।
এ বিষয়ে মোঃ শফিকুল ইসলাম ১৪/০৯/২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে আমি টাকার অংক ও প্রাপক এর নাম আমি নিজেই লিখেছি। তখন তাকে বলা হয় যে, আপনার এ বক্তব্য দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হবে প্রতিউত্তরে তিনি হুমকি সহ মিথ্যা মামলার ভয় দেখান।
মোঃ শফিকুল ইসলাম এর সুদে কারবারি বিষয় নিয়ে গত ১৪/০৯/২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে একটি প্রতিবেদন তৈরি করি যাহা ১৫/০৯/২০২৩ খ্রিস্টাব্দ তারিখে দৈনিক নাগরিক ভাবনায় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। হুমকি প্রদানের কারনে তাহার বিরুদ্ধে গংগাচড়া মডেল থানায় একটি জিডি করা হয় জিডি নম্বর ১০৩৭ তারিখ ১৪/০৯/২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। এবিষয়ে কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার কাছে অভিযোগ আসলে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।