ইসলামী ব্যাংকের জন্য আলাদা আইন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ আইন কার্যকর হলে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দিতে পারবে না। এ জন্য গঠন করতে হবে সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এ সিদ্ধান্ত খুব একটা লাভজনক হবে না বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, যেসব ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং করছে উইন্ডো বা ব্রাঞ্চের মাধ্যমে, তারা প্রত্যেকেই ভালো অবস্থায় আছে। একটাকে ইসলামী, আরেকটাকে ট্রেডিশনাল করে দিয়ে ভালো ফল আসবে মনে হয় না। আমরা যদি আলাদাভাবে ব্যালেন্সশিট, ইনকাম স্টেটমেন্ট করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিদের্শনা ঠিকমতো মানি এবং তারা যদি ঠিকমতো নজরদারি রাখে, শরীয়াহ্ বোর্ড যদি ঠিকমতো থাকে তাহলে আমার মনে হয় এখানে সমস্যা হওয়া উচিত নয়।
তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ব্যবসায়িকভাবে কোনও সমস্যা না থাকলেও ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে জটিলতা আছে। প্রচলিত ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিলে তহবিল ব্যবস্থাপনা ও তদারকি দুটোই কঠিন বলে মনে করেন তারা।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, আমার অভিমত, কোনোটিই যথার্থভাবে হচ্ছে না। প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটের সাথে ইসলামী শাখারও মিলেই তো তহবিলের শিটটা হয়। কতটা শরিয়াহ্ভিত্তিক ও সহীহ হচ্ছে? আর ইসলামী নামে যেসব ব্যাংক করা হলো, তারা কতটা আদর্শিক নাকি ব্যবসার স্বার্থে নামটি ব্যবহার করা হলো?
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে আলাদা আইন সমর্থন করি। এখানে তো আসলে আমরা ব্যবসা করার জন্য শরীয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকিং করছি না। আমরা করতেছি তো টাকা কামানোর জন্য। ইসলামের নাম বলে লোকজন থেকে কিছু টাকা-পয়সা নেয়া। যখন চালু করে তখন কি ইসলামী ব্যাংকিং করে? টোটাল পোর্টফোলির ১ শতাংশও পিএলএস নেই। তাহলে কেন ইসলামী নাম দিয়ে ইসলামী ব্যাংকিং করতে যাওয়া হয়?
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আইনটি এখনও খসড়া পর্যায়ে আছে। কোনও বিষয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, আইন তৈরি করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের স্টেকহোল্ডার অ্যানালাইসিস করতে হয়। আন্তর্জাতিক নীতিমালাগুলো কী আছে, তা দেখতে হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো কখনও ইসলামিক উইন্ডো খুলে না।
স্বার্থসংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়েই চূড়ান্ত করা হবে ইসলামী ব্যাংক কোম্পানি আইন। বর্তমানে দেশে শরিয়াভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকের সংখ্যা ১০টি। এর বাইরে আরও ৩০টি প্রচলিত ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এসব ব্যাংকের ৩৩টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা এবং প্রায় ৭শ’ উইন্ডো রয়েছে।
খবরের চোখ /ঢাকা /ডিসেম্বর ২০২৪